অন্য মা
রিতম কর
প্রাসাদপম হাওড়া স্টেশন থেকে কয়েকশো মিটারের দূরত্বে বস্তির মধ্যে ছোট্ট লখাই কে নিয়ে ছোট্ট জগৎ মিনতির।কেও জানেনা লখাই এর বাবার খবর,লখাই পেটে থাকার সময় রোজ রাতে ছাইপাশ গিলে এসে মারধোর করতো মিনতিকে।কিন্তু ছেলে বিয়োনোর পর হঠাৎ একদিন থেকে একদম হাফিস, কেও জানেনা লোকটার খবর।সেই থেকে দুঃখকেই বুকে তুলে নিয়েছে সে।আজ একটু বাড়তি ইনকাম হওয়ায় সামান্য মাংসের ঝোল ভাত দেখে ছ’বছরের লখাইএর মুখে যে নিষ্পাপ হাসি…ওহ,ওই হাসিটুকু দেখার জন্যই তো নিজের মতো করে সে খুঁজে নিয়েছে বাঁচার পথ।তাই সে দিনে লেবু বেচে আর রাতে খদ্দের এলে ফেরায় না।ইস্টিশন এর কয়েকজন কুলি মালবাহক তার বাঁধা।হোক পাপ…যখন খেতে না পেয়ে মরতে বসেছিলো তখন তো কোনো শালা খোঁজ নেয়নি।আর এসব এলাকায় কেও কারোর দিন গুজরানে নজর দেয় না।এতে নিজের ২৪বছরের শরীরটাও জুড়ালো আর পয়সাও হলো।দেহ এবং লেবু বেচেও যে ঝকঝকে টিন কেনা অসাধ্য,এক বাবুর দয়ায় সেটাও তো হয়েছে।লখাই এখন প্ল্যাটফর্মের ইস্কুলে যায়।কি এক এন.জি.ও না কি থেকে যেন ওদের ওখানে ফিরি তে পড়ায়,ওখানকার দিদিমনিরা বলে,লখাই এর মাথা ভালো,ওর কিছু একটা হবে।এই কিছু হওয়ার জন্যই তো এত কিছু ওর।এই পয়সাতেই তো সে লখাইকে পড়াতে পারছে,এক-দুটো জামাকাপড়।মাথায় লাগাবার একটু গন্ধ তেল,এক টুকরো সাবান….তাহলে তার দোষটা কিসের…সে খুব ভালো করেই বোঝে অন্যরা জীবন-যাপন করে আর তারা বেঁচে থাকে,আর সেই আবর্জনার স্তুপে বেঁচে থাকার মধ্যেও একমাত্র আলো তার ছোট্ট লখাই।